...

শিক্ষা ও শিক্ষকতা। পর্ব : ০১-১০

০১।
শিক্ষাদানের জন্য ছাত্রদের মাঝে শুধুমাত্র প্রেরণা যোগালেই হবে না। তারা কিভাবে শিখবে তাও তাদের হাতে ধরে শেখাতে হবে। এবং এমন ভাবে শেখাতে হবে যেন তা প্রাসঙ্গিক, অর্থবহ ও স্মরণীয় হয়। উত্তম শিক্ষাদানের জন্য প্রয়োজন আপনার দক্ষতা প্রদর্শন করা। এজন্য দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য সর্বদা যত্নবান হওয়ার বিকল্প কিছু নেই। এবং নিজের পড়াশোনা, গবেষণা ও মুতালায় প্রচুর সময় দিতে হবে।

০২।
শিক্ষকতা একপ্রকার আনন্দদায়ক ও তৃপ্তির কাজ। একজন আদর্শবান ও ভালো শিক্ষক শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে তার দক্ষতা ও নৈপুণ্যের অনুশীলন করে থাকেন অর্থের জন্য কিংবা বাধ্য হওয়ার জন্য নয়; বরং, তিনি প্রকৃতপক্ষে পাঠদানকে মন থেকে উপভোগ করেন। এবং মন দিয়েই কাজটি করতে চান। তখন তিনি শিক্ষাকেন্দ্রিক চিন্তা ছাড়া অন্য কোন চিন্তাও করতে চান না।

০৩।
দারস বা ক্লাসে যতদূর সম্ভব ছাত্রদের নাম ধরে সম্বোধন করা। এর ফলে ছাত্ররা বুঝতে পারবে, আপনি প্রতিটি ছাত্রকে মূল্যবান ব্যক্তি হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছেন। ছাত্র যদি বুঝতে পারে শিক্ষক আমাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন তাহলে ছাত্র এবং শিক্ষকের মাঝে সেতুবন্ধন দৃঢ় হবে। এতে করে দারস বা ক্লাসে ছাত্রের মনোযোগও বৃদ্ধি পাবে।

০৪।
ছাত্রের মেজাজ বোঝার চেষ্টা করা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। সে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত কিনা তা সচেতনভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে। ছাত্রের মেজাজ খারাপ কিংবা তাকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত দেখলে তার পিঠে হাত বুলানো। নরম ও সুন্দর শব্দে তাকে সান্ত্বনা দেওয়া। তার সাথে হেসে দুই চারটা কথা বলা। ছাত্রের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এটি একটি উত্তম পদ্ধতি হতে পারে।

০৫।
শিক্ষকতা করতে গিয়ে অনেক সময় আমরা মারাত্মক কিছু প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হই। এক্ষেত্রে সমস্যাকে প্রশ্রয় না দিয়ে নিজেই নিজেকে সান্তনা দেওয়া। এবং নিজেকে এ পথে একা না ভাবা। নবীন, প্রবীণ, অভিজ্ঞ এবং যোগ্যতাসম্পন্ন সকল শিক্ষক এরূপ সমস্যার মোকাবেলা করেই প্রতিকূল পরিস্থিতির সাথে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিয়েছেন। সর্বদা শিক্ষকতার মাহাত্ম্য গুরুত্ব ও নবী রাসূলের কাজ ভেবে সবকিছু স্বাচ্ছন্দে মেনে নেওয়া।

০৬।
একজন আদর্শ শিক্ষকের মৌলিক গুণাবলীর একটি হল,
ছাত্ররা বড় হয়ে কি হতে চায় প্রত্যেকের কাছ থেকে পৃথক পৃথকভাবে তা জানার চেষ্টা করা। এবং সে অনুযায়ী ছাত্র তার পড়াশোনা করছে কিনা তার খবরাখবর রাখা। ছাত্রের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য তাকে সুন্দর পাঠ্য তালিকা দেওয়া। এবং পাঠ্য তালিকা সংগ্রহ করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি দৈনন্দিন মোতালা করার পদ্ধতি, সময় ও পরিমাণ বলে দেওয়া।

০৭।
শিক্ষকদের একটি বড় সমস্যা হল,
তাদের কাছে ছাত্ররা যত বিষয়ের পরামর্শ নিতে আসে তারা সবগুলোর সমাধান দিতে চেষ্টা করেন। চাই শিক্ষকের সব বিষয়ে জ্ঞান থাক বা না থাক। এক্ষেত্রে সবজান্তার পরিচয় না দিয়ে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পারদর্শী শিক্ষকের কাছে ছাত্রকে অর্পন করাই শ্রেয়। ফলে ছাত্র তার প্রশ্নের কাঙ্ক্ষিত উত্তর ও সমাধান সহজেই জানতে পারবে। এ সৎ সাহস দেখাবার কারণে শিক্ষকের সম্মান আসলে কমে না, বরং বাড়ে।

০৮।
শিক্ষকদের পারস্পরিক কোন্দল, বিদ্বেষ, কূটনীতি ও রাজনীতি কখনো কখনো ছাত্রদের চরিত্রনাশের কারণ হয়। কেননা এর কুপ্রভাব সরাসরি ছাত্রদের মাঝে পড়ে। ফলে ছাত্রদের মাঝেও দলাদলি ও বিভক্তি দেখা দেয়। শিক্ষকদের এই মহামারি বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ভিতর থেকে ফাঁপা করে দিয়েছে।

০৯।
আমরা শিক্ষকরা প্রমিত বা আদর্শ উচ্চারণে কথা বলি না। বরং আঞ্চলিক ভাষায় কথ বলি। কিন্তু একজন আদর্শ শিক্ষক ঘরোয়া পরিবেশে আঞ্চলিক ভাষায় কথা বললেও পাঠদান কালে তিনি শুদ্ধ ভাষার বাইরে যান না। মার্জিত ও শুদ্ধ উচ্চারণ একজন ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তোলায় ব্যাপক ভূমিকা রাখে। যিনি শুদ্ধ উচ্চারণে কথা বলেন তিনি কখনো ছাত্রকে তুইতুকারি করতে পারেন না। ছাত্রদের গালি দিতে পারেন না। মনে রাখতে হবে, ছাত্রদের সাথে ভাষা ব্যবহারে সচেতন থাকাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

১০।
ছাত্রদের মাঝে ধর্মীয় জাগরণ, চারিত্রিক দীক্ষা এবং তাদের মধ্যে দৃঢ়তা ও আধ্যাত্মিকতা সৃষ্টির জন্য শিক্ষকদের কেবল গভীর অধ্যায়ন, শিক্ষাগত ও মেধাগত যোগ্যতাই যথেষ্ট নয়; বরং কবি ইকবালের ভাষায় এর জন্য কমপক্ষে শিক্ষকদের দূরদর্শিতা, অন্তর-দরদী ভাষা ও হৃদয়য়োত্তাপ প্রয়োজন। এই গুণগুলো আমাদের মাঝে ততটুকুন আছে আল্লাহই ভালো জানেন।

Add a Comment

Your email address will not be published.

× হোয়াটসঅ্যাপ
Seraphinite AcceleratorOptimized by Seraphinite Accelerator
Turns on site high speed to be attractive for people and search engines.