মৃত্যু সবার জন্য অবধারিত। কিসের এত গর্ব!
তোমরা কেউ কখনো জানাজা দেখেছো?
কখনো কি এমন লোকের গল্প শুনেছো যে মাটি কাঁপিয়ে হাঁটতো। যার কথায় প্রতিটি শ্রবণ পরিতৃপ্ত হত। যার ক্রোধের তীব্রতায় প্রতিটি হৃদয় ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়তো।
হঠাৎ তার জীবনে মৃত্যু আসলো। ফলে সে একটা আত্মাহীন দেহে পরিণত হলো। বিশ্বাস করো তখন একটি মাছি তাড়াবার ও একটি কুকুর ছানা প্রতিহত করবার সামান্য শক্তিটুকু তার বাকি থাকে নি।
কখনো এমন সুন্দরী রমণীর গল্প শুনেছো। যার রূপ ছিল হৃদয়ের আকর্ষণ ও দৃষ্টির শোভন। যার সৌন্দর্য ও যৌবন উপচে পড়তো গোটা শরীরে। যার ইন্দ্রজাল ও গোলযোগ ছড়িয়ে পড়তো সর্বত্র। এবং যার গোলাপ-কলির মত দুই ঠোঁটে সামান্য একটি চুমু অঙ্কনে ব্যয় হতো মোটা অংকের অর্থ। মর্মর পাথরের ন্যায় যার দু’পায়ের গোছায় রূপ-লাবণ্য জ্বলজ্বল করত।
হঠাৎ তার জীবনে মৃত্যু নামক এক শাশ্বত বিধান কার্যকর হলো। ফলে তার শরীর জীর্ণতা ও পঁচনে রূপ নিল। আর কীটপতঙ্গ তার দেহে চড়ে বেড়াতে লাগলো। অথচ কিছুদিন পূর্বেও এ দেহ ছিল সুন্দরী পূজারীদের কেবলা। এবং তার চেহারা ক্ষতবিক্ষত হলো যেখানের একটি চুমু ক্রয় হতো প্রচুর সম্পদের বিনিময়ে।
তোমরা ইতিহাসের পাতায় কখনো ভয়ঙ্কর ব্যক্তির ইতিহাস পড়েছ। যার ভয়ে সাহসীরা প্রকম্পিত হত। এবং যার ভয়ে সম্ভ্রান্ত ও প্রতাপশালী ব্যক্তিও কেঁপে উঠতো। যার চোখে চোখ রাখার ধৃষ্টতা কেউ কখনো দেখাতো না। যার সকল কথা বিধানে রূপ নিত। আর যার আদেশ শেষ সমাধান বলে বিবেচিত হতো। কিন্তু একদিন তার গোটা দেহ মাটি হয়ে গেল। তার কবর শিশুদের খেলার বস্তুতে রূপ নিল। এবং তার কবর আবর্জনায় পরিণত হল।
কখনো সবুল শ্যামল তৃণলতা সমৃদ্ধ স্থান অতিক্রম করেছো। যেখানে ছিল পাথরের সমাধি ফলক। যা তোমাদের কাছে কবর বলে পরিচিত। তারপরও তোমরা কেন মানতে পারছো না, মৃত্যু নামক একটি বস্তু রয়েছে।
তোমরা তো কত উপদেশ বাণী পড়ে থাকো। কত সতর্কবাণী শুনে থাকো। অথচ মনে করো এই বাণী ও উপদেশ অন্যের জন্য। এ কেমন অবিচার!
মৃত্যুর খাটিয়া তো দেখেছ অনেক। প্রচুর জানাজায়ও উপস্থিত হয়েছো। অথচ দুনিয়া নিয়ে থাকো বিভোর। কামনা বাসনার মায়াজালে সর্বদা ডুবে থাকো। এ কেমন অবিচার!
যেন মৃত্যু তোমাদের কখনো হাতছানি দিবে না। যেন মৃতরা তোমাদের মতো কোনো-এক দিন জীবিত ছিল না। শুনে রাখো তাদের অন্তরে তোমাদের তুলনায় অধিক চাওয়া-পাওয়া ছিল।
রাজত্ব নিয়ে রাজার এত বাড়াবাড়ি, আত্মম্ভরিতা ও গর্ব কিসের আশায়, কিসের ভরসায়। আর কেনইবা ভাবে এ রাজত্ব চিরকালের জন্য তার। অথচ দুনিয়া কারো জন্য চিরস্থায়ী নয়। যদি দুনিয়া কারো জন্য চিরস্থায়ী হতো তাহলে তোমার পর্যন্ত কি দুনিয়া গড়াতো। কখনো না।
অতীতে অত দাপট, শক্তি ও ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তিরা পৃথিবীর বুকে দম্ভভরে চলেছে। কিন্তু পরে কি হলো। পৃথিবী তাদের গলাধঃকরণ করল। আর মানুষ তাদের নাম নিশানা পর্যন্ত ভুলে গেল।
গায়ক তার গানে, বীর তার শৌর্যে-বীর্যে, যুবক তার যৌবনে, আর সুস্থ সবল ব্যক্তি তার সুস্থতা নিয়ে প্রতিনিয়ত ধোঁকা খাচ্ছে। আর ভাবছে এ রঙ্গমঞ্চ এ প্ল্যাটফর্ম চিরকাল তাদের হয়ে থাকবে। হায় আফসোস!
পৃথিবীতে এমন কি আছে যা মৃত্যুর সম্মুখীন হয়নি। গগনচুম্বী অট্টালিকা একদিন ভূপাতিত হয়ে মাটির সাথে মিশে যায়। সুউচ্চ গাছগাছালি শুকিয়ে একদিন জ্বালানি হয়ে যায়। হিংস্র সিংহের দেহ কুকুর ছিন্নভিন্ন করে খায়। এই নশ্বর পৃথিবী একদিন এমন একটি দিন দেখবে যেদিন পাহাড়-পর্বত চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবে। আকাশ বিদীর্ণ হবে। নক্ষত্ররাজি ঝরে পড়বে। মহান আল্লাহ্ ব্যতীত সব, সব ধ্বংস হয়ে যাবে। শুধু থাকবেন আল্লাহ। সেদিন তিনি ঘোষণা করবেন-
لمن الملك اليوم
আজকের রাজত্ব কার? তিনি নিজেই তখন উত্তর দিবেন-
لله الواحد القهار
(আজকের রাজত্ব) প্রতাপশালী এক আল্লাহর।
তাইতো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যুর কথা বেশি বেশি স্বরণ করতে বলেছেন। সূতরাং মৃত্যুকে সর্বদা স্বরণ করো। মৃত্যুর স্বরণের মাধ্যমে মনের উচ্চাকাঙ্খা ও হৃদয়ের কঠোরতার বিরুদ্ধে শক্ত হয়ে দাঁড়াতে পারবে। উদার মনের অধিকারী, সহনশীল, উপদেশ গ্রহণের উপযুক্ত ও ঈমানের সাথে সর্বদা থাকতে পারবে।
আর মৃত্যুর জন্য তুমি যদি প্রস্তুত থাকো তাহলে তোমার যাবতীয় সরঞ্জামাদি হবে পরিপাটি ও গোছালো। ডাক আসবে আর সাথে সাথে সাড়া দিবে। আর আনন্দের সাথে সফর শুরু করবে। আর যদি অপ্রস্তুত থাকো তাহলে তোমার যাবতীয় সরঞ্জামাদি হবে অগোছালো ও ছড়ানো-ছিটানো। ডাক আসলে পাথেয় শুন্য হয়ে সাড়া দিতে হবে।
তাই তাওবার মাধ্যমে নিজেকে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত রাখো। এর মাধ্যমে আল্লাহর সাথে তোমার হিসাব নিকাশ পরিস্কার থাকবে। এবং মানুষের হক আদায় করো। মাজলুমকে সহযোগীতা করো। এর মাধ্যমে মানুষের সাথে তোমার হিসাব পরিস্কার থাকবে।
কখনো একথা ভেবে ধোঁকাগ্রস্ত হইও না-
তুমি যুবক, তুমি মহান, তুমি ধনী। মৃত্যুদূত যখন সগৌরবে সামনে আসবে তখন দেখবে না কে যুবক, কে বৃদ্ধ, কে মহান, কে ধনী, কে গরীব। আর তোমার তো জানা নেই কখন মৃত্যুদূত তোমার দুয়ারে কড়া নাড়বে।